কুরআন ও হাদিসের দলিল ভিত্তিক, ভ্রমণে সুরক্ষিত থাকার দুয়া সমূহ
গত রমাজান শেষে ঈদে আমি ঢাকা থেকে দেশে ফিরছিলাম। পথিমধ্যে গাড়িতে ঘটে যার এক… ভয়ঙ্কর সড়ক দুর্ঘটনা। যা সম্পর্কে নিচের ভিডিওতে বলা হয়েছে।
তাইতো দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার যে সকল দুয়া রয়েছে তা নিয়ে আজকের এই ব্লোগ।
সরাসরি দুয়া সমূহ জানতে ভিডিওর নিচে চলে যান-
এছাড়া প্রতিদিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় অথবা দূরে কোথাও গেলে দোয়া পড়ে বের হওয়া উচিত। এতে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে মুক্ত থাকতে পারে মানুষ।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় একটি দোয়া পড়ার কথা বলেছেন আল্লাহর রাসুল (সা.)। এই দোয়া পড়লে সব ধরনের বিপদ-আপদ ও অসুবিধা থেকে আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করেন। দোয়াটি হলো-
আরবি :
بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ وَ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থ : আল্লাহর নামে, আল্লাহ তায়ালার ওপরই নির্ভর করলাম, আল্লাহ তায়ালার সাহায্য ছাড়া বিরত থাকা ও মঙ্গল লাভ করার শক্তি কারো নেই।
দোয়া পড়ার ফজিলত
আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি কেউ ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, তবে তাকে বলা হয় (আল্লাহ তায়ালাই) তোমার জন্য যথেষ্ট, তুমি হেফাজত অবলম্বন করেছ (অনিষ্ট থেকে)। তাতে শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪২৬)
গাড়িতে উঠার দোয়া
এছাড়া বাহনে চড়ার পর মহানবী (সা.) এই দোয়াটি পড়তেন—
بسم الله الرحمن الرحيم سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। সুবহানাল্লাজি সাখখারালানা হা-যা ওয়া-মা-কুন্না লাহু মুকরিনিন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুন কালিবুন।’
অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি অত্যন্ত দয়ালু ও অশেষ করুণাময়। তিনি পূতপবিত্র ওই সত্তা যিনি বাহনকে আমার অধীন করে দিয়েছেন। আমাদের কাছে তাকে আয়ত্তে আনার ক্ষমতা ছিল না। অবশ্যই আমরা আমাদের প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
রাসুল (সা.) আরেকটি দোয়া পড়তেন—
اللهم إنا نسألك في سفرنا هذا البر والتقوى ومن العمل ما ترضى ، اللهم هون علينا سفرنا هـذا واطوِ عنا بعده ، اللهم أنت الصاحب في السفر والخليفة في الأهل ، اللهم إني أعوذ بك من وعثاء السفر وكآبة المنظر وسوء المنقلب في المال والأهل
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফি সাফরিনা হা-জাল বিররা ওয়াত তাকওয়া, ওয়া মিনাল আমালি মা তার-দা আল্লাহুম্মা হাউয়িন আলাইনা সাফারনা হা-যা, ওয়াতওই আন্না বু’দাহু, আল্লাহুম্মা আনতাস্-সাহিবু ফিস্-সাফার, ওয়াল খালিফাতু ফিল আহলি ওয়াল মাল। আল্লাহুম্মা ইন্না নাউজুবিকা মিন ওয়া-ছা-ইস সাফারি ওয়া-কাআবাতিল মানজারি, ওয়া সুইল মুনকালাবি ফিল আহলি ওয়াল মাল।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের এ সফর সহজ করে দাও। রাস্তার দূরত্ব কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সফরের সঙ্গী এবং আমাদের পরিবারের কাছে তুমি আমাদের স্থলাভিষিক্ত। হে আল্লাহ! তোমার কাছে সফরের কষ্ট-ক্লান্তি ও ভয়ানক দৃশ্য দেখা থেকে এবং পরিবার, সম্পদ-বিত্ত ও অধীনস্তদের কাছে খারাপ অবস্থায় ফেরত আসা থেকে তোমার কাছে রক্ষা চাই। (মুসলিম, হাদিস : ৯৭৮/২)
ভ্রমণকালীন দোয়া পাঠের উপকারিতা
যখন মুসলমান ছোট কিংবা বড় কোনো সফরে বের হয়, তখন তার উচিত নবীজীর (সা.) শেখানো এ দোয়াটি পাঠ করা। এতে করে তার ভ্রমণ হবে নিরাপদ ও শঙ্কামুক্ত।
ক. ভ্রমণে বের হওয়ার সময় দোয়া পাঠ করলে ফিরে আসা পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে।
খ. ভ্রমণের শুরুতে দোয়া পাঠের কারণে পুরো ভ্রমণটাই তার জন্য ইবাদতে পরিণত হবে।
গ. আল্লাহতায়ালা দোয়া পাঠকারীর জন্য তার ভ্রমণকে সহজ করে দেন।
ঘ. দোয়া পাঠে ভ্রমণকালীণ প্রতিটি কাজে আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়।
সারা বিশ্বে প্রতিনিয়ত শত শত মানুষ রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। তাই ভ্রমণ আনন্দজনক হওয়ার পাশাপাশি কিছুটা বিপদজনকও বটে।
দুর্ঘটনা শুধুমাত্র সড়কপথে নয়; আকাশপথ ও নদীপথেও দুর্ঘটনার হার কম নয়। তাই প্রতিবার ভ্রমণের পূর্বে নিরাপত্তার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। কারণ একমাত্র তিনিই আমাদেরকে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দান করতে পারেন।
আর হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের উচিত অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকা।
আর কখনো ভ্রমণে বের হলেও সম্ভাব্য সকল নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি নবীজীর (সা.) শেখানো দোয়া পাঠ করা।
বর্তমান সময়ে চলাচলের ক্ষেত্রে অবস্থা এমন যে, বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর সুস্থভাবে বাড়িতে ফিরে আসাই এখন যেন অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক ও যানবাহন পরিচালনায় আইন অমান্য করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোই এসব সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
সফরের সময়ের করণীয় সম্পর্কে একাধিক হাদিস রয়েছে। যেসব করণীয়গুলো মেনে চলাফেরা করলে দুর্ঘটনা থেকে অনেকাংশে নিরাপদ থাকা যাবে। হাদিসে এসেছে-
>> ‘যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে, তখন দুই রাকাত নামাজ পড়ে বের হবে। এ নামাজ তোমাকে ঘরের বাইরের বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করবে।’
>> বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় এ দোয়া পড়া
بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهْ
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ’ পড়া। (আবু দাউদ)
> যানবাহনে ওঠার সময় بِسْمِ الله (বিসমিল্লাহ) বলে পা রাখা।’ (আবু দাউদ)
>> যানবাহনে উঠে বসার পর ৩ বার (আল্লাহু আকবার) বলে এ দোয়া পড়তে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে-
اَلْحَمْدُ لِلّهِ سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ
উচ্চারণ : ‘আলহামদুল্লিাহি সুবহানাল্লাজি সাখখারালানা হাজা ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনিনা ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনক্বালিবুন।’
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَى وَمِنْ الْعَمَلِ مَا تَرْضَى اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ
‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফি সাফারিনা হাজালবির্রা ওয়াত তাক্বওয়া ওয়া মিনাল আমালি মা তারদা আল্লাহুম্মা হাওয়্যেন আলাইনা সাফারিনা হাজা ওয়াত্বয়ি আন্না বুদাহু।’
– اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ وَالْخَلِيفَةُ فِي الْأَهْلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمُنْقَلَبِ وَسُوْءِ الْمَنْظَرِ فِيْ وَ الْمَالِ الْأَهْلِ.
‘আল্লাহুম্মা আনতাস সাহিবু ফিস সাফারি ওয়াল খালিফাতু ফিল আহলি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ওয়াছায়িস সাফারি ওয়া কাআবাতিল মুনক্বালাবি ওয়া সুয়িল মানজারি ফি ওয়াল মালিল আহলি।’
>> সফরের কোথাও অবস্থান বা বিশ্রামের প্রয়োজন হলে এমনভাবে অবস্থান করা, যাতে পথচারী বা স্থানীয়দের চলাফেরায় ব্যাঘাত না ঘটে।’ (বুখারি)
> দূর থেকে গন্তব্যস্থান দেখতে পেলে ৩ বার এ দোয়া পড়া-
اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهَا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফিহা।’ (তাবারানি)
>> সফর শেষে গন্তব্যস্থানে প্রবেশের সময় এ দোয়া পড়া-
اَللّهُمَّ ارْزُقْنَا جَنَاهَا وَحَبِّبْنَا إلَى اَهْلِهَا وَحَبِّبْ صَالِحِىْ اَهْلِهَا إلَيْنَا.
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মারযুক্বনা ঝানাহা ওয়া হাব্বিবনা ইলা আহলিহা ওয়া হাব্বিব সালিহি আহলিহা ইলাইনা।’ (তাবরানি)
>> সফরের কাজ শেষ হলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসা। অযথা সফরকে দীর্ঘ করা ভাল নয়।’ (বুখারি)
> দীর্ঘ দিনের সফর শেষে বাড়ি ফিরে এসেই সরাসরি ঘরে না যাওয়া। বরং প্রথমে নিজ গ্রাম বা মহল্লার মসজিদে এসে দুই রাকাআত নামাজ পড়া। তারপর বাড়িতে আসার সংবাদ দিয়ে কিছুক্ষণ পর লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজ বাড়িতে প্রবেশ করা। আবার দীর্ঘ সফর থেকে ফিরে গভীর রাতে বাড়িতে প্রবেশ না করা।’ (মুসলিম, বুখারি)
উল্লেখ্য যে, সফর থেকে বাড়ি আসার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করে সাজানো উচিত। তবে বাড়ির লোক যদি সফর থেকে ফিরে আসার সংবাদ জানা থাকে বা বাড়ির লোক অপেক্ষায় থাকে তবে রাতে বাড়ি ফিরতে অসুবিধা নেই বলেও বুখারির এক বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে।
>> সফর থেকে ফিরে এসে এ দোয়া পড়া-
آيِبُوْنَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ
উচ্চারণ : ‘আয়িবুনা তায়িবুনা আবিদুনা লিরাব্বিনা হামিদুনা।’ (তিরমিজি)
সফরে যানবাহনে চলাচলে যাবতীয় দুর্ঘটনা থেকে মুক্ত থাকতে যেমন সফরকারীকে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা উচিত, আবার হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী সফরের সুন্নাত ও হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করাও জরুরি।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মানুষের সফরকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ করুন। আমিন।
সকাল-সন্ধ্যার বিশেষ আমল
হজরত উসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিদিন ভোরে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় যে কোনো বান্দা এ দোয়াটি ৩ বার পাঠ করবে, কোনো কিছুতেই তার অনিষ্ট/ক্ষতি হবে না-
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস্সামায়ি ওয়া হুয়াস্সামিউল আলিম।’
অর্থ : ‘ওই আল্লাহ তাআলার নামে, যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ (তিরমিজি)
নিয়মিত ৪ তাসবিহ’র আমল
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একদিন এক আরব বেদুইন এসে বললেন- হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে (যে কোনো) একটি ভালো আমল শিখিয়ে দিন-
তখন এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই বেদুইনের হাত ধরলেন। আর তাকে (সামনে বসিয়ে) এ শব্দগুলো শেখালেন এবং বললেন এ শব্দগুলো (৪ তাসবিহ) বেশি বেশি পড়বে-
> سُبْحَانَ الله : সুবহানাল্লাহ; আল্লাহ পবিত্র
> اَلْحَمْدُ للهِ : আলহামদুলিল্লাহ; সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য
> لَا اِلَهَ اِلَّا الله : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই
> اَللهُ اَكْبَر : আল্লাহু আকবার; আল্লাহ তাআলাই মহান (সবচেয়ে বড়)।
ব্লোগটি আমাদের প্রফাইলে শেয়ার করে রাখি ইংশাআল্লাহ।
#IslamicBlog
#IslamicDua
#Islamic
#Learning
Recent Comments